আজ লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্তদিবস

প্রতিবেদক : এমএন /আর
প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : নয় মাসে অর্ধ-শতাধিক খন্ড যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত হয়েছে। আজ ৪ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্তদিবস। মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মাস্টার রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মুনসুরুল হকের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর হানাদার দখল থেকে লক্ষ্মীপুর শত্রু মুক্ত হয়েছে।

এ দিনটি একদিকে ছিল বিজয়ের আনন্দের; অপরদিকে ছিল স্বজন হারানো বেদনা। নয় মাস মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে জেলার রামগতি রায়পুর রামগঞ্জ কমলনগর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধ-শতাধিক খন্ড যুদ্ধ হয়। এর মধ্যে রামগঞ্জ-মীরগঞ্জ সড়কে ১৭বার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মত এবারো শহীদদের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত, র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজল কান্তি দাস।

যুদ্ধে লক্ষ্মীপুর জেলায় ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ শতাধিক লোক শহীদ হয়েছেন। সদর উপজেলায় ২৩ জন, রামগতিতে ২জন, কমলনগর ১জন, রায়পুরে ৭জন ও রামগঞ্জে ২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

এছাড়াও শতাধিক পাকবাহিনীর সদস্য এবং পাঁচ শতাধিক রাজাকার নিহত হয়। তম্মধ্যে বাগবাড়ি মাদাম ব্রীজের পাশে ৭০জন পাকসেনা যুদ্ধে মারা যায়। এপ্রিলের শেষ দিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সর্ব প্রথম লক্ষ্মীপুর প্রবেশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা খবর পেয়ে মাদাম ব্রীজটি ভেঙ্গে দেয়। হানাদার বাহিনী শহরে প্রবেশ করতে না পেরে মাদাম ব্রীজের নিচ দিয়ে নৌকায় করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়।

মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মাস্টার রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও অধ্যক্ষ মুনসুরুল হকের নেতৃত্বে অকুতোভয় কয়েকজন যুবক এসময় মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তাদের কাছে ছিল ৫টি রাইফেল ও ৫টি গ্রেনেড। এরপর ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নেন আ ও ম শফিক উল্যা, তোফায়েল আহমেদ, আনোয়ার হোসেন, হামদে রাব্বী, ফিরোজ আলমসহ কয়েকজন। তারা মাস্টার রফিকের সাথে যোগ দেন। এরপর জেলার বিভিন্ন স্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে মরনজয়ী যুদ্ধ শুরু করেন।

মে মাসের শেষ দিকে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধের পর লুধূয়া গ্রামের একটি পুকুরের কচুরিপেনার ভেতর থেকে পাকাসেনাদের ফেলে যাওয়া ১টি রকেট ল্যাঞ্চার, ৭টি চাইনিজ রাইফেল, ১টি এলএমজি, ৭ হাজার গুলি উদ্ধার করা হয়। এ অস্ত্র দিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে তারা আরও ভয়ংকরভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

নয় মাসে যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পাকসেনারা বাগবাড়ির একটি পরিত্যাক্ত বাড়িতে টর্চারসেলে অসংখ্য নারী-পুরুষকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এসব লাশ পাশ্ববর্তী বাগবাড়ি গণকবরে পুতে রাখে। সবশেষে ৪ ডিসেম্বর শহরের বাগবাড়ির পশ্চিম দিক থেকে হাবিলদার আবদুল মতিন ও উত্তর দিক থেকে রফিক স্যারের নেতৃত্বে যুদ্ধ হলে এ সময় শতাধিক রাজাকার আত্মসমর্পন করে; লক্ষ্মীপুর হয় শত্রু মুক্ত ।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন