সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ১৮ মে, ২০২২ ১:১৭ অপরাহ্ণ

সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তিত রয়েছে। বুধবার (১৮ মে) সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়া সিলেট নগরীর বন্যা কবলিত এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যুৎ ছিল না দক্ষিণ সুরমা এলাকায়।

জানা গেছে, বন্যার কারণে বিভিন্ন উপজেলার দোকানপাট ও হাটাবাজার পানির নিচে থাকায় খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা-সারি, ধলাই সবকটি নদনদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান (বুধবার) সিলেট আসছেন।

সিলেট নগরীর আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিপুল সংখ্যক বন্যা দুর্গত লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি, ছাত্রাবাসের মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বরইকান্দি বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-৩-এ পানি প্রবেশ করায় মঙ্গলবার (১৭ মে) সকাল থেকে স্টেশন রোড, বাবনা, বঙ্গবীর রোড, পিরোজপুর, লাউয়াই, বরইকান্দি, মোল্লারগাঁওসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

যমুনা তেল ডিপোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় তেল সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। সুরমা নদীর পাড়ে গড়ে উঠা চালের আড়ত ও মিলে পানি প্রবেশ করায় বিপুল পরিমাণে ধান-চাল ভিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে ট্রাকযোগে ধান-চাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তালতলাসহ সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। বিভিন্ন বাসা বাড়ির নিচ তলায় পানি রয়েছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে বাসিন্দাদের।

এদিকে, সীমান্তবর্তী সিলেট সদর উপজেলা, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরবর্তীত রয়েছে। গরু-মহিষ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই সব এলাকার খেটে খাওয়া মানুষজন। উপজেলার স্কুলগুলোকে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাটখোলা-জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৯০ ভাগ মানুষ। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের টুকেরাবাজের পানি উঠে যাওয়ায় যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।

সিলেট শহরের সাথে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পরিবহনের অভাবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ত্রাণ সরবরাহ একেবারেই অপ্রতুল।

কোম্পানীগঞ্জের পূর্ব ইসলামপুর, ইছাকলস, দক্ষিণ রনিখাইসহ সবকটা ইউনিয়নের তিন-চারটি করে গ্রাম ছাড়া বাকি সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন। অনেকে আসবাবপত্র, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছেন। ওই সব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করছেন। নলকূপ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে না অনেকে। এ অবস্থায় অত্যন্ত কষ্টে আছেন ইউনিয়নবাসী।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, উজানে এখনো প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যার্তদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার-চাল পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন আজ তার নির্বাচনি এলাকা সিলেট সদরের হাটখোলা-জালালাবাদসহ বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবেন। ত্রান ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানও সিলেটের গোয়াইনঘাট ও জৈয়ন্তাপুর এলাকা পরিদর্শন করবেন।

 

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন