চা দোকানি নয়নের জিপিএ-৫ অর্জন

প্রতিবেদক : এমএন /আর
প্রকাশিত: ৮ মে, ২০১৮ ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

অদম্য মনোবল আর ইচ্ছাশক্তির কাছে শতপ্রতিকূলতাও হার মানে। চা দোকানি জিহাদ শেখ নয়ন যেন সে কথাটিই আবার প্রমাণ করলো। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।

মা মারা গেছেন ৮ বছর আগে। বাবা আবার বিয়ে করে সংসার পেতেছেন। সৎমায়ের সংসার। তারপরও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে- এমন স্বপ্ন জিহাদ শেখ নয়নের।

সাধ থাকলেও তেমন সাধ্য নেই। স্কুলে ক্লাস আর বাবার চায়ের দোকানে কাজ। অনেক সময় টাকার জন্য রাজমিস্ত্রির কাজও করেছে। ঠিক মতো পড়াশোনা করতে পারেনি। তারপরও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীন শৈলকুপা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভোকেশনাল বিভাগের জেনারেল মেকানিক্স গ্রুপ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেছে নয়ন।

জিহাদ শেখ নয়ন শৈলকুপা উপজেলার মালিপাড়া গ্রামের হতদরিদ্র সাহেব আলীর ছেলে। তার রোল নং: ৬৫৩৬১১, রেজি: নং- ৩৭১৪৮২।

শৈলকুপা উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি অফিস) কার্যালয়ের দেয়ালঘেঁষা চায়ের দোকানে জিহাদ শেখ নয়নের ব্যস্ততা সবারই চোখে পড়ে। বেশিরভাগ ক্রেতা তাকে নিছক চা বিক্রেতা হিসেবেই জানতো। কিন্তু আজ সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্য দেখিয়ে।

নয়ন স্কুলে ঠিকমতো যেতে পারেনি। বাবা সাহেব আলীর মাত্র ৫ শতক জমি আছে। চায়ের দোকানের আয় দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তার মায়ের ইচ্ছা ছিলো ছেলে লেখাপড়া শিখে বড় হবে। নিজেও স্বপ্ন দেখে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে।

নয়ন বলেন, ঠিকমতো পড়াশুনা করতে পারিনি। অধিকাংশ সময় চায়ের দোকানে কাজ করেছি। টাকার জন্য অনেক সময় রাজমিস্ত্রির কাজও করেছি। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছি। উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে আরো বেশি টাকার দরকার। এত টাকা কোথায় পাবো? লেখাপড়া কি বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছি না।

নয়ন আরো জানায়, ইচ্ছা আছে কোনো পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়ার। এরপর সেনাবাহিনীতে চাকরির জন্য আবেদন করবো।

তবে লেখাপড়া চালাতে শুধু চা বিক্রিই নয়, সম্মানজনক যে কোনো ধরনের কায়িক পরিশ্রম করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই তার।

নয়নের বাবা সাহেব আলী বলেন, ছেলেটি ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া ও খেলাধুলার প্রতি বিস্তর আগ্রহ। কিন্তু অর্থাভাবে ছেলের আশা পূরণ করতে পারিনি। ছেলেটি অধিকাংশ সময়ই চায়ের দোকানে সময় কাটিয়েছে।

শৈলকুপা সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, সবার দোয়া ও সহযোগিতা থাকলে নয়নের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের কাছে তার লেখাপড়ায় সহায়তার বিষয়ে তুলে ধরা হবে।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন