আজ লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস

প্রতিবেদক : এমএন /আর
প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস আজ। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে, এ জেলায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। এরমধ্য দিয়ে জেলাবাসী মুক্তিপায় পাক-বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আল বদরদের হত্যা, লুট আর নির্যাতনের হাত থেকে।

 

এরআগে স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে লক্ষ্মীপুর জেলা ছিল পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদরদের হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরকে হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস জেলার বিভিন্নস্থানে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এতে শহীদ হন ১১৪ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েক হাজার মুক্তিকামী বাঙ্গালী। পাক-হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে সর্বপ্রথম মুক্তিযোদ্ধারা জেলা শহরের মাদাম ব্রীজটি উড়িয়ে দেয়। আজও এর স্মৃতি হিসেবে ব্রীজের লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে।

 

মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ধরে পাক-হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তান্ডবলীলা চালায়। হানাদার বাহিনী শহরের বাগবাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী হাজার হাজার নর-নারীকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাত এবং যুবতীদের পাশবিক নির্যাতন শেষে হত্যা করে বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রীজ এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গর্তে ফুতে ফেলতো। আবার অনেককেই ফেলে দিতো খর¯্রােতা রহমতখালী নদীতে। নারকীয় এসব হত্যাযজ্ঞের নিরব সাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়ীস্থ গণকবর, মাদাম ব্রীজ, পিয়ারাপুর ব্রীজ ও মজুপুরের কয়েকটি হিন্দু ও মুসলমান বাড়ী।

 

কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানিয়েছেন, ৭১ সালের ২১মে ভোর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর ও দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় ভয়াবহ তান্ডবলীলা চালায় পাকহানাদার বাহিনী। বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে, বহু মানুষকে গুলি ও বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা। এতে শহীদ প্রায় ৪০জন নিরস্ত্র মুক্তিকামী বাঙ্গালী।

 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল সূত্রে জানায়, দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর শহীদদের কবর জিয়ারত ও মোনাজাত, র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

 

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর থেকে, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে। অবশেষে, ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী ও এর দোসররা।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন