রায়পুরে ‘গুম’ করা বাবাকে ফিরিয়ে এনেছে অভিযুক্ত ছেলেরা

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ২৫ জুলাই, ২০২২ ৮:৩০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সম্পত্তির জন্য হাত-পা শেকলে বেঁধে ‘গুমের’ ৪দিন পর সেই বৃদ্ধ মোহাম্মদ উল্যাকে বাড়িতে ফিরেয়ে এনেছে চার ছেলে। রোববার (২৪ জুলাই) ঢাকার অজ্ঞাত স্থান থেকে তাকে বাড়িতে আনা হয়। সোমবার (২৫ জুলাই) বিকেলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গত ৪ দিন মোহাম্মদ উল্যা কোথায় ছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। অভিযুক্ত চার ছেলে মাসুদ আলম, আলমগীর হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও উজ্জল হোসেনও সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। তবে তাদের দাবি, মোহাম্মদ উল্যা অসুস্থ ছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন তিনি সুস্থ আছেন। এজন্য তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।

তবে মোহাম্মদ উল্যা অসুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার বৃদ্ধ মা হালিমা খাতুন, বোন ফাতেমা খাতুন ও মেয়ে রাবেয়া সুলতানা। তারা জানান, মোহাম্মদ উল্যার স্ত্রী রোকেয়া বেগমসহ ৪ ছেলে সম্পত্তির জন্য গুমের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এখন প্রশাসনের চাপে পড়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনেছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, শুক্রবার (২২ জুলাই) ভোর রাতে তার হাত-পা শিকলে বেঁধে ঘর থেকে বের করে নেয় অভিযুক্ত ছেলেরা। তার চিৎকারে পাশ্ববর্তী আনোয়ার হোসেন সবুজ ও ইব্রাহিম ঘর থেকে বের হয়ে ঘটনাটি দেখতে পায়। এসময় বাধা দিতে গেলে সবুজ ও ইব্রাহিমকে মারধর করে ওই ৪ জন। একপর্যায়ে মোহাম্মদ উল্যাকে বাড়ি থেকে নিয়ে গুম করে রেখেছিল নিষ্ঠুর ছেলেরা। এ ঘটনায় একইদিন বিকেলে মোহাম্মদ উল্যাকে অমানবিক নির্যাতন ও রাতের অন্ধকারে হাত-পা শিকল দিয়ে বেঁধে গুম করার প্রতিবাদে স্থানীয়রা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।

মোহাম্মদ উল্যাহ উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরবংশী গ্রামের ষ্টীল ব্রিজ এলাকার (আবু তাহের মেম্বার বাড়ি) মৃত অজি উল্যার ছেলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোহাম্মদ উল্যার কয়েক একর কৃষি জমি রয়েছে। প্রায় ২ কোটি টাকার ১৫টি গরুর দুগ্ধ খামার রয়েছে। তার ছেলেরা পরিবার নিয়ে পৃথকভাবে বসবাস করে আসছে। তার সন্তানরা চাচ্ছে, মোহাম্মদ উল্যা জীবিত থাকতেই যেন তার সম্পত্তির বন্টন হয়। কিন্তু মোহাম্মদ উল্যা রাজি হচ্ছে না। এজন্য স্ত্রী রোকেয়াসহ ছেলেরা ষড়যন্ত্র করে তাকে গুম করেছে। এখন পুলিশ প্রশাসনের চাপে পড়ে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

ঘটনার দিন অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, মানসিকভাবে অসুস্থ বাবাকে তারা চিকিৎসার জন্য একটি সংস্থার কাছে নিয়ে গেছেন। সংস্থার নাম জানতে চাইলেও তিনি বলতে পারেননি। এসময় তিনি ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন।

মোহাম্মদ উল্যার স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, মোহাম্মদ উল্যা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে। তার সম্পত্তির সবকিছু নিজেই ভোগ করছেন।

রায়পুর থানার ওসি শিপন বড়ুয়া জানান, ছেলেরা তাদের বৃদ্ধ বাবা মোহাম্মদ উল্লাহকে চিকিৎসার জন্য রাতে ঢাকায় নিয়েছিলেন। সুস্থ করে তাকে রোববার রাতে বাড়িতে নিয়ে এসেছে তার ছেলেরা।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন