উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে আবারও একই ব্যাক্তি ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজ সভাপতি

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ৭ জুলাই, ২০২২ ৮:২৭ অপরাহ্ণ

কোন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি পদে কোন ব্যক্তি পর পর দুবার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর হাইকোর্টের এই নির্দেশনাটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি বিধিমালায় সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন আদালত। কিন্তু চাঁদপুর সদর উপজেলার ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে একই ব্যাক্তি টানা ৬বার সভাপতি হিসেবে আছেন। তিনি ২০০৯ সাল থেকে সভাপতি পদে আসিন হওয়ার পর কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দায়িত্বে রয়েছেন। অনিয়ম করে সভাপতি পদ দখল করে রাখা, একাধিক অভিযোগে এই পর্যন্ত উচ্চ আদালত এবং চাঁদপুর আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্ত ব্যাক্তি হলেন একই এলাকার বাসিন্দা সুজিত রায় নন্দী। তিনি সম্প্রতি সময়ে উচ্চ আদালতের ৪টি আদেশ অবমাননা করেছেন। আবার তিনি নিজেকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবী করে আসছেন। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির বিষয়টিও স্থানীয়ভাবে বিতর্কিত। বর্তমানে তিনি সপ্তমবার সভাপতি হওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কলেজের সর্বশেষ নিয়মিত কমিটির মেয়াদ চলতি বছরের ১৭ মার্চ শেষ হয়। এরপর ১৮০ দিনের জন্য এডহক কমিটি হয়। সেখানেও সভাপতি পদে সুজিত রায় নন্দী। ১৮০ দিনের ৯০ দিন শেষ। এরপর নির্বাচন না দিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করে সুজিত রায় নন্দী আবারও সভাপতি হওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চললাচ্ছেন। নির্বাচন কিংবা কোন ধরণের প্রচার প্রচরণা ছাড়াই সপ্তম বারের মত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্যরা। এর আগের কমিটির অভিভাবক সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক মিজি তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে ৩৯২২/২০২১নং রীট করেছেন। ওই রীটে ২৯ জুন ২০২১ তারিখে উচ্চ আদালত কলেজ কমিটি স্থগিত করেন। তিনি রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ নিয়েছেন। কিন্তু রুল নিস্পত্তি করেননি। এছাড়াও আব্দুর রাজ্জাক বিগত দিনে কলেজের অনিয়মের বিস্তারিত অভিযোগ এনে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর দরখাস্ত দিয়েছেন।

কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীর ও নোমান মাউশি ডিজি, কলেজ সভাপতি সুজিত রায় নন্দী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করেছেন। জাহাঙ্গীর ও নোমানের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা চলমান অবস্থায় তারা দোষী সাবস্ত না হওয়া পর্যন্ত তাদের অর্ধেক বেতন ও খরপোষের টাকা দেয়ার জন্য পৃথক দু’টি রীট করলে উচ্চ আদালত তা বাস্তবায়নের জন্য আদেশ দেন মাউশি’র ডিজি, কলেজ সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বেগমকে। কিন্তু তারা সকলেই উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করেন। যার ফলে শিক্ষক জাহাঙ্গীর উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননা করার করাণে মাউশির ডিজি, সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আদেশ অবমনানানর মামলা করেন। মামলাটি চলমান।
এদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ হাসান খান বাদী হয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল জালিয়াতি করায় অভিযোগে চাঁদপুর সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি চলমান।

অভিভাবক সদস্য ও উচ্চ আদালতে মামলার রীটকারী আব্দুর রাজ্জাক মিজি অভিযোগে উল্লেখ করেন, আমি কলেজ সভাপতি সুজিতের বিরুদ্ধে শুধু মামলাই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কারণ সুজিত রায় নন্দী অবৈধ প্রতিষ্ঠাতা। সভাপতি বৈধতা করার জন্য করেছেন মহাদুর্নীতি। ৬০ লাখ টাকা ভুয়া অনুদান দেখিয়ে রেজুলেশন করেন। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী দখল করে আছেন সভাপতি পদ। তার অধীনে থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি আক্তার অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। কলেজের গান্ধী ভবন টেন্ডার না দিয়ে নিজ আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে কাজ করিয়ে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সভাপতি।

উচ্চ আদালতে রীটকারি শিক্ষক জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যে কারণে সাময়িক বরখাস্তের পর আইনীভাবে কাজ করছি। আমি উচ্চ আদালতে একটি রীট ও পরবর্তীতে অবমাননা মামলা করেছি।

কলেজের এডহক কমিটির আগে নিয়মিত কমিটির সদস্য জহিরুল ইসলাম, রহুল আমিন হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর মেম্বার বলেন, এডহক কমিটি হওয়ার আগে সভাপতি সুজিত রায় নন্দী দীর্ঘ প্রায় দুই বছর আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। উনার ইচ্ছেমত মিটিং করেছেন এবং লোকবল নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের পরামর্শ ছাড়াই তিনি সকল সিদ্ধান্ত নেন। যেসব সমস্যা বসে আলোচনা করে সমাধান করা যেত, সে সব বিষয়ে মামলা করে কলেজের অর্থ অপচয় করেছেন। এতে তিনিও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত দুই শিক্ষককে অর্ধেক বেতন ও খরপোষ দেয়ার বিষয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ থাকলেও তা গ্রহন না করে, না মেনে এবং কোন ব্যবস্থা কেন নেননি এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বলেন, মন্ত্রণালয় তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। করোনার কারণে কলেজ থেকেও কোন সম্মানি দিতে পারেনি। মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলে তারা বেতন-ভাতা পাবে। এসব বিষয়ে বাকী কোন বিষয় জানার প্রয়োজন থাকলে সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধক্ষ্যের কাছ থেকে জেনে নেন। আমি আর কিছু বলতে পারব না।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দাসের নিকট কলেজ কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়িয়ে নিবে। নতুন কমিটি করার জন্য সভাপতি আমাকে কোন কথা বলেনি।

ফরক্কাবাদ ডিগ্রি কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি সুজিত রায় নন্দী বলেন, কলেজ এডহক কমিটির মেয়াদ সময় আরো বাকী আছে। বার বার সভাপতি হতে আইনগত কোন বাঁধা নেই। কারণ নিয়মিত কমিটির বিষয়ে উচ্চ আদালাতে যে রীট হয়েছে, সেই রীট সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে এই রীট অর্থাৎ মামলাটি অপ্রয়োজনীয়। রুল নিস্পত্তির বিষয়টি উচ্চ আদালতের বিষয়।

কলেজের গান্ধী ভবন নির্মাণে কেন টেন্ডার দেয়া হয়নি এবং ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সুজিত রায় নন্দী বলেন, ওই ভবন নির্মাণ কাজের টাকা এখনো বাকী আছে।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন