লাইভে এসে সন্তানসহ যুবকের আত্মহত্যার চেষ্টা, রক্ষা করলো পুলিশ

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ২০ মার্চ, ২০২২ ১:২১ অপরাহ্ণ

স্ত্রী কর্তৃক ডিভোর্সের বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে ৪ বছর বয়সী ছেলে সন্তান ও ৯ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন এক যুবক। এ জন্য শহরের কালিরবাজার থেকে ক্রয় করেছিলেন চার বছর বয়সী ছেলে, নয় বছর বয়সী মেয়ে ও নিজের জন্য কাফনের কাপড়। পরিকল্পনা ছিলো সিদ্ধিরগঞ্জস্থ মৌচাকের ভাড়া বাসায় গিয়ে ছেলে-মেয়েসহ গলায় ফাসঁ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। ১৮ মার্চ বিকেলে নিজ ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে স্ত্রী শ্বশুর বাড়ীর লোকজনকে উদ্দেশ্য করে নিজের আত্মহত্যার কথা জানিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজ গন্তব্যের পথে।

কিন্ত লাইভ দেখে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কেউ একজন বিষয়টি জানায়। জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে সংবাদ পেয়ে ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক সুকান্ত দত্ত লাইভে আসা যুবকটির ফেইসবুক আইডি থেকে তার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান ও ফতুল্লা থানার ওসি রকিবুজ্জামানের পরামর্শে যুবকটির সাথে কথা বলেন। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট কাউন্সিলিং করে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ করে তাকে কৌশলে থানা পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসেন। একই সাথে যুবকটির শ্বশুর, শ্বাশুড়ি সহ স্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে প্রায় চার ব্যাপক কাউন্সিলিং শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান, ফতুল্লা থানার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান, পরিদর্শক মোজাম্মেল হক ও ফতুল্লা থানার উপ-পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত সমাঝোতা করে স্বামী-স্ত্রীকে শ্বশুর শাশুড়ির নিকট তুলে দেন।

ফতুল্লা থানার উপ পরিদর্শক সুকান্ত দত্ত জানায়, বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ সংবাদ আসে যে এক যুবক দুই সন্তানসহ আত্মহত্যা করবে এই মর্মে লাইভে এসে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে। পরে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা ফেইসবুক আইডির লিংকটি। সেখান থেকে সংগ্রহ করা হয় লাইভে আসা যুবকের মোবাইল ফোন নাম্বার। সেই নাম্বারে যুবকের সাথে প্রায় ৪৫ মিনিট কাউন্সিলিং করে তার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার প্রস্তাব দিলে তার কথায় রাজী হয়ে ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে চলে আসে ফতুল্লা থানায়।

অপরদিকে, স্ত্রী সহ যুবকের শ্বশুর শাশুড়িকে নিয়ে আসা হয় ফতুল্লা থানায়। সাড়ে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আলোচনা শেষে রাত ১১টার দিকে শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি, স্ত্রীর সাথে যুবকের সমাঝোতা করে দেয়া হয়।

লাইভে আসা যুবক জানায়, দশ বছর পূর্বে তার বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ বছর বয়সী একটি ছেলে ও ৯ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে তার স্ত্রী শ্বশুর বাড়ীতে চলে যায়। গত কয়েকদিন পূর্বে সে জানতে পারে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। সেটা জানতে পেরে সে তার শ্বশুরের দ্বারস্থ হলে শ্বশুর তাকে চড় থাপ্পড় মেরে তাড়িয়ে দেয়। এতে করে সে সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছিলেন।

কিন্ত স্ত্রীকে ফিরে পাবার কোনো সুরাহা না পেয়ে সে ছেলে মেয়ে সহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরিকল্পনানুযায়ী মৌচাকে একটি রুম ভাড়া নেয়া হয়। সেখানেই এক সাথে ছেলে মেয়ে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা ছিলো। শহরের কালিরবাজার থেকে কেনা হয়েছিলো তিনজনের জন্যই কাফনের কাপড়।

ফতুল্লা মডেল থানার ইনচার্জ রকিবুজ্জামান জানান, তার কর্ম জীবনের সবচাইতে ঝুঁকির দিন ছিলো। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঝুঁকি নিয়ে মেধার সবটুকু দিয়ে ৩ জনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সামর্থ্য হয়েছে। তার কর্মজীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে তিনি মনে করেন।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন