লক্ষ্মীপুরে পর্যটকদের দৃষ্টি হলুদে রাঙা সরিষা ক্ষেতে

প্রতিবেদক : এমএন /আর
প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি, ২০২০ ৬:৪২ অপরাহ্ণ

সবুজ আর হলুদের মিতালী সরিষা ক্ষেত। যেখানে রয়েছে চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে।

প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকনে ভারাক্রান্ত মনটিও যেন আনন্দে ভরে উঠবে। হলুদ-সবুজের মিতালীর দেশে সেলফিবাজরাও নানান ভঙ্গিমা ধারণ করে। একে নানা প্রজাতির মাছি-মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনার শ্রেষ্ঠ স্থানও বলা চলে। সকালের সূর্যের ছোঁয়া পেতে গাঁয়ের বিভিন্ন বয়সীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে বসে থাকে।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট স্লুইস গেইটের দক্ষিণ পাশের্^ সরিষা ক্ষেতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়। 

সরিষা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় ছুটোছুটি করে স্কুলে যাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তখন বই হাতে ও স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মনে হয় তারা হলুদের রাজ্যে মিশে গেছে। আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে সরিষা ফুল ছেঁড়া নিয়ে ভাই-বোনের খুনসুটিও বেশ মানানসই। ওই রাস্তাগুলো ব্যবহার করতে ভুলে না গ্রামের মেয়ে-বউসহ নানা বয়সী মানুষ। ওই পথ দিয়েই মাথাই বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোন এক মুরব্বি। শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা।

দূর থেকে দেখা যায়, গরু ও লাঙল দিয়ে জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন এক কৃষক। যার চারপাশেই সরিষা ক্ষেত। দূর থেকে মনে হচ্ছে, সরিষা ক্ষেত মাড়িয়ে ফসল নষ্টের কাজে ব্যস্ত তিনি। কিন্তু তা নয়, তিনি তার খালি জমিতে অন্য ফসল আবাদের লক্ষ্যে জমি প্রস্তুত করছেন।

মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি- ‘নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের’ সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা ক্ষেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁফিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। হাত-পা-সূড়গুলো ফুলের সঙ্গে গেঁথে এক-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে চলে যায় আপন নীড়ে। একই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও।

মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। যেকোন অবস্থাতাইে থাকুক সুন্দরের কদর তারা করবেই। যদি সেই সৌন্দর্যটি আবার সু-ঘ্রাণযুক্ত হয়- তাহলেতো আরো বেশি আকৃষ্ট হয়। সরিষা ক্ষেতে অপার সৌন্দর্য আর ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পিপাসুদের টেনে নিয়ে যায়। সেলফীবাজদেরও আনাগোনায় মুখরিত থাকে হলুদ-সবুজের মিতালী সরিষা ক্ষেতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের ৫টি উপজেলাতে ২৭১ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৭৫, রায়পুরে ১৬০, রামগঞ্জে ১৫, রামগতি ৫ ও কমলনগর ১৬ হেক্টর জমি। সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. শাকিব ও সারোয়ার ইয়াসিন বলেন, এই মৌসুমে এখানে সরিষার চাষ করা হয়। শুকনো হওয়ায় বিদ্যালয় যেতে সরিষা ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে যাওয়া আঁকা বাঁকা পথটিই ব্যবহার করি। সরিষা ফুলগুলো দেখতে সুন্দর। এর ঘ্রাণও খুব ভালো লাগে। প্রায়ই দেখি দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে সরিষা ক্ষেতে ছবি তোলে। অনেকে আবার এসে সময় কাটান।

লক্ষ্মীপুর মজু চৌধুরীর হাট এলাকায় সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলতে আসা আরাফাত রহমান অমি বলেন, সরিষা ক্ষেত দেখতে খুব সুন্দর। ফুলের ঘ্রাণ বেশ মনোমুগ্ধকর। এজন্য এখানে বন্ধুকে নিয়ে ছবি তুলতে এসেছি। এই জায়গায় বিভিন্ন মৌসুমে নানা প্রজাতির ফসলের চাষবাষ হয়। সেসব ফসলের ক্ষেত দেখতেও ভালো লাগে। তাই মাঝে মাঝে এখানে আসি।

হাসান মাহমুদ শাকিল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন