রায়পুরের সাব রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতির নামে মামলা

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ৮:২৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব সংবাদদাতা : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে জাল দলিল সৃজন করায় সাবেক সাবরেজিষ্ট্রার অমৃত লাল মজুমদার ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সফিকুল ইসলাম হাওলাদারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অমৃত লাল বর্তমানে শরিয়তপুর জেলা রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট (রায়পুর) আমলী আদালতের বিচারক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এ নির্দেশ দেন। কৃষক আব্বাস উদ্দিন মামলাটি দায়ের করেন। বিকেলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের নাজির ইয়াছিন আরাফাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাদীর আইনজীবী আনোর হোসেন মৃধা বলেন, সাব রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখকের সহযোগীতায় দাতার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অভিযুক্তরা জাল দলিল তৈরি করেছে। এ ঘটনায় মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামি ২১ মার্চ এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

অভিযুক্ত অমৃত লাল রায়পুর উপজেলার সাবেক সাব রেজিষ্ট্রার ও মামলার ৫ নম্বর আসামি। অভিযুক্ত সফিকুল রায়পুর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও মামলার ২ নম্বর আসামি। প্রধান আসামি বাদী আব্বাসের সৎ মা হনুফা বেগম। অন্যরা হলেন দলিলের সাক্ষী বাবুল হোসেন দেওয়ান, ইউসুফ খান, বাদীর ভাই সামছুল আলম।

বাদী আব্বাস রায়পুর উপজেলার চরমোহনা ইউনিয়নের চর মোহড়া গ্রামের মৃত লুৎফর রহমান ও মৃত খোরশেদের নেছার ছেলে।

এজাহার সূত্র জানায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে আব্বাসের মা খোরেশেদের নেছা মারা যান। এর ৩-৪ বছর পর তার বাবা লুৎফর বিয়ে করেন হনুফা বেগমকে। আব্বাসরা ৬ ভাই ও ৪ বোন। তার বাবা ২০১২ সালে মারা যান। লুৎফর বেঁচে থাকা অবস্থায় মৌখিকভাবে ছেলে-মেয়েদেরকে জমি বন্টন করে দেন। সেই সূত্রেই ছেলেমেয়েরা জমিতে ভোগদখলে রয়েছে। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভাই আবদুর রশিদের কাছ থেকে আব্বাস ৬ শতাংশ জমি (দলিল নং-৪৬৩১) ক্রয় করেন। ওই জমিটি ২৫ বছর রশিদের দখলেই ছিল। ক্রয়সূত্রে আব্বাস জমিটি নিজের নামে নামজারি, জমা খারিজ ও খতিয়ানও করেছেন।

এদিকে প্রায় ৬ মাস আগে অভিযুক্ত হনুফার কাছ থেকে জমিটি ক্রয়সূত্রে ছেলে সামছুল আলম মালিকানা দাবি করেন। আর হনুফা তার স্বামীর কাছ থেকে সাফ কবলা মূলে মালিকানা দাবি করে জমিটি বিক্রি করেন। ঘটনাটি নিয়ে আব্বাস স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারকে জানায়। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর এক বৈঠকে ২০০৬ সালের ২৬ জুনের একটি দলিল (নং ২৮৭৩) উপস্থাপন করে। এটি মূল কপি বলে দাবি করে অভিযুক্ত সামছুল। কিন্তু দলিলে আব্বাস ও সামছুলের বাবার নাম লেখা ছিল লুৎফের রহমান। অন্যদিকে লুৎফর রহমান ছিলেন স্বশিক্ষিত। নিজের নাম লেখা ছাড়া তিনি পড়ালেখা জানতেন না। তিনি লুৎফর রহমান লিখেই স্বাক্ষর দিতেন। তার স্বাক্ষরে বিক্রিত জমির দলিলেও লুৎফর রহমানই লেখা আছে। এতে অভিযুক্ত সামছুলের কাছে থাকা দলিলটিতে যেকোন শিক্ষিত ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া লুৎফর রহমানের পরিবর্তে অন্য কাউকে দাঁড় করিয়ে জাল-জালিয়াতের মাধ্যমে হনুফা বেগম তার জমি লিখে নেয়।

আব্বাস উদ্দিন বলেন, জাল দলিল সৃজনে অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে সাব রেজিষ্ট্রার অমৃত লাল মজুমদার ও দলিল লেখক সফিকুল ইসলাম জড়িত ছিলেন। এতে মামলায় তাদেরকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় সুষ্টু বিচার চাই।

দলিল লেখক সফিকুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি পুরনো, আমার মনে নেই। মামলার বিষয়টিও আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বিকেলে শরিয়তপুর জেলা রেজিষ্ট্রার অমৃত লাল মজুমদারের মোবাইল নাম্বারে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এসএমএস পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন