মেঘনার প্রতিটি ঢেউ উপকূলে সর্বনাশ ঢেকে আনছে

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ১৪ জুলাই, ২০২০ ১১:১৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: মেঘনা উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর। জেলা সদর রায়পুর কমলনগর ও রামগতি উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে এ নদীটি। কিন্তু প্রায় ৩৫ বছর ধরে অব্যাহত ভাঙনে মেঘনা গিলে নিয়েছে ঘর-বাড়িসহ সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে ব্লকের বাঁধ নির্মাণ না হলেও দ্রুত বড় বড় জিওব্যাগ ডাম্পিং জরুরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এ দাবি উপকূলের বাসিন্দাদের।

সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়ন থেকে কমলনগর হয়ে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার এলাকা মেঘনা উপকূল। ঘরবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও ফসলি জমিসহ পুরো এলাকারই বিস্তির্ণ অঞ্চল নদী ভাঙনে তলিয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বাজার, বাড়ি ও পূর্বপুরুষের কবর। দিন দিন বেড়েই চলেছে নদীর তীব্রতা। নদীতে জোয়ারের পানিতে নিম্নঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপকূলে আঁচড়ে পড়া মেঘনার প্রতিটি ঢেউ সর্বনাশ ঢেকে আনছে।
এদিকে কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ বাজারকে ভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় একদল যুবক জঙ্গলবা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২৬ জুন থেকে এ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে এখনো অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার ফুট এলাকায় বাঁশের বেড়া, গাছ, কাঠ দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এটি প্রায় ৩ ফুট এলাকায় নির্মাণ করা হবে। তবে এ বাঁধটি শুধু কমলনগরকে বাঁচাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনের খোরাক মাত্র। মেঘনার তীব্রতায় যে কোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে জঙ্গলা বাঁধটি। নদীর ভাঙন থেকে উপকূলকে বাঁচাতে প্রয়োজন স্থায়ী বাঁধের। জিও ব্যাগ ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি উপকূলবাসীর।
সূত্র জানায়, স্থানীয় যুবকদের জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্যরা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। তাদের সহযোগীতায় এগিয়ে যাচ্ছে নির্মাণ কাজ। শুক্রবার (১১ জুলাই) আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অবঃ) আবদুল মান্নান ২ লাখ টাকা সহায়তা করেছেন। তার প্রতিনিধি কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন ও বিকল্পধারার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আবু ছিদ্দিক বাঁধ নির্মাণের উদ্যোক্তাদের কাছে টাকা হস্তান্তর করেন।
জানা গেছে, সদর উপজেলা থেকে রামগতি পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। কিন্তু অরক্ষিত ৩২কিলোমিটার এলাকা ধীরে ধীরে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনকালীন জনপ্রতিনিধিরা নদী শাসনে কাজ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। গেল ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এরআগে বিদ্যালয় ভবনটির অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়ে।
অন্যদিকে রামগতি উপজেলার চররমিজ ইউনিয়নের বয়ারচরের টাংকি বাজার এলাকায় একটি বিশাল ঝাউ বাগান ছিল। ওই বাগানটি সবসময় পর্যটনমুখর ছিল। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ২০১৯ সালের শেষে দিকে পুরো ঝাউ বাগানটি মেঘনার বুকে বিলীন হয়ে যায়। ঝাউ বাগানটি কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে মানুষের মনে। টাংকি বাজার মাছঘাটটি জেলার বৃহৎ একটি ইলিশের হাট হিসেবে পরিচিত। ঘাটটিতে দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। কিন্তু যেকোন সময় বিলীন হয়ে যেতে পারে ঘাটটি। ভাঙনে সদর উপজেলার বুড়ির খাল এলাকার অর্ধ-শতাধিক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্যোক্তা জসিম উদ্দিন জানান, নাছিরগঞ্জ বাজারটি রক্ষায় তারা জঙ্গলাবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ১ হাজার ফুট বাঁধ করা হয়েছে। কিন্তু নদীর তীব্র ঢেউয়ে বাঁধটি বিধ্বস্ত। সেটি পুনরায় ঠিক করা হচ্ছে। ৩ হাজার ফুট এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। তবে এটি দিয়ে ভাঙন ঠেকানো কোনমতেই সম্ভব না। আপাতত বড় বড় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে নদী ভাঙন রোধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
উপজেলা বিকল্পধারার সাধারণ সম্পাদক আবু ছিদ্দিক বলেন, জঙ্গলা বাঁধ নির্মাণে এমপি আবদুল মান্নান সহযোগীতা করেছেন। কিন্তু এ বাঁধটি সাময়িক, পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন বলেন, জঙ্গলা বাঁধটি স্থায়ী সমাধান নয়। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজন জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও ব্লকের মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন, উনি যেন একনেকের মাধ্যমে নদীর তীর রক্ষা বাঁধের জন্য বরাদ্দ দিয়ে কমলনগরকে রক্ষা করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে একনেক সভায় কমলনগর-রামগতি রক্ষায় ৩৭ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প পাস হয়। প্রথম পর্যায়ে রামগতিতে সাড়ে চার এবং কমলনগর উপজেলায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু রামগতি-কমলনগর রক্ষা প্রকল্পটি ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাতিল করা হয়েছে। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন