রমজানের রাতগুলো জেগে থাকি তাহাজ্জুদে

প্রতিবেদক : এমএন/ এমএস
প্রকাশিত: ৯ মে, ২০২০ ১০:১০ অপরাহ্ণ

রমজানের প্রতিটি সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এ মাস আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মাস এবং বান্দাকে আপন করে নেয়ার মাস। আল্লাহ তাআলার ইবাদতসমূহের মাঝে মূল ইবাদত হলো নামাজ। কুরআনুল কারিমে নামাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বারবার মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে। কোথাও নামাজের হেফাজতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কোথাও রীতিমত নামাজ পড়ার নির্দেশ রয়েছে, আবার কোনো স্থানে সময়মত নামাজ পড়ার নির্দেশ রয়েছে।

মূলত আল্লাহ তাআলা সমগ্র মানবজাতি সৃষ্টি করেছেন কেবল তার ইবাদত করার জন্যই। আমাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা। আমরা নামাজ, রোজা ঠিকই করছি আর তার সন্তুষ্টির আকাঙ্খাও রয়েছে কিন্তু তারপরেও কেন আমরা তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারছি না?

এর মূল কারণ হচ্ছে- যেভাবে আমাদের ইবাদত-বন্দেগি করা উচিত সেভাবে হয়তো আমরা নামাজ আদায় করছি না। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতগুলোর দিকে হয়তো দৃষ্টি দিচ্ছি না।

ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে বান্দা গভীরভাবে আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হওয়ার সুযোগ পায়। এ নামাজ মানুষকে আল্লাহমুখী ও তার সন্তুষ্টির পানে নিয়ে যায়। আর রোজার দিনগুলোতে বান্দা যখন বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য দাঁড়ান তখন আল্লাহও তার প্রতি দয়ার আচরণ করবেন। অথচ রমজান ছাড়া আমরা হয়তো মাসেও একদিন তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করি না।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা আত্মশুদ্ধির জন্য সর্বাধিক কঠিন পন্থা এবং বাক্যালাপে সর্বাধিক দৃঢ়তাদানকারী।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল: আয়াত ৬)

মূলত গভীর রাতে জেগে নামাজ, দোয়াসহ ইত্যাদি আত্মশুদ্ধির কাজ করলে কুপ্রবৃতিসমূহ দমন হয় এবং নিজের আত্মাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরীভাবে সাহায্য করে। আল্লাহর বান্দাদের এই একই অভিজ্ঞতা যে, আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য গভীর রাতের দোয়া ও নামাজের মত এত কার্যকরী পন্থা আর কোনো কিছুতে নেই।

কেননা গভীর রাতের নীরবতায় হৃদয়ের মাঝে এক প্রশান্তি বিরাজ করে। এছাড়া তাহাজ্জুদের সময়টা ব্যক্তির চারিত্রিক শক্তি অর্জনের পক্ষে এবং নিজের কথাবার্তায় প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে অনেক উপযোগী।

আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দারা রাত কাটিয়ে দেয় তার ইবাদতে। তারা শুধু রমজানের দিনগুলোতেই নয় বরং বছরের অন্যান্য রাতকে জাগিয়ে রাখে তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে। আল্লাহর এই প্রিয় বান্দাদের উদ্দেশ্যে তিনি ইরশাদ করেন-
‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সেজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয় এবং যারা বলে-
رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানাসরিফ আন্না আজাবা জাহান্নামা ইন্না আজাবাহা কানা গারামা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের ওপর থেকে দোযখের আযাবকে অপসারিত কর, নিশ্চয় এর আযাব সর্বনাশা।’ (সুরা ফুরকান: আয়াত ৬৪-৬৫)।

আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় বান্দাদের আহাজারী গ্রহণ করেন। তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন। তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্বের বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফরজ নামাজসমূহের পর উত্তম নামাজ হলো রাতের তাহাজ্জুদ।’ (মুসলিম)

স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যকে তাহাজ্জুদের জন্য ডেকে তোলা সুন্নত। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। আল্লাহ তাআলা সেই স্ত্রীর প্রতি রহম করেছেন, যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে, তবে তার মুখে পানির ছিটা দেয়।’ (আবু দাউদ ও নাসাঈ)

মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে অধিক হারে ইবাদত-বন্দেগিতে রত হয়ে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

মাহমুদ আহমদ , ইসলামি গবেষক

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন